বাংলায় প্রথম ছন্দের বই
বাংলায় প্রথম ছন্দের বইটির নাম হল নরহরি চক্রবর্তী (ঘনশ্যাম দাস)-এর লেখা ‘ছন্দঃসমুদ্র। এটি অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকেই লেখা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। পুরো বইটি খুঁজে পাওয়া যায় নি। কেবল প্রথম তরঙ্গ আর দ্বিতীয় তরঙ্গের খানিকটা পাওয়া গেছে। এইটুকুর গুরুত্ব কম নয়।
নরহরি বলেছেন –
“যদি দীর্ঘবর্ণ জিহ্বা লঘু উচ্চারয়।
সেই বিকল্পেতে লঘু কহিয়ে নিশ্চয়।।
যখন ‘দীর্ঘবর্ণ’ অর্থাৎ সংস্কৃত উচ্চারণের নিয়মে যা দীর্ঘধ্বনি, তা বাংলায় লঘু উচ্চারণ হয়, তখন তাকে লঘু বলেই মেনে নিতে হবে।
এ কথা বলে নরহরি বাংলা উচ্চারণের প্রকৃতি সম্পর্কে তাঁর সূক্ষ্ম দৃষ্টির পরিচয় রেখেছেন। আমরা জানি যে বাংলায় দীর্ঘস্বর উচ্চারণ করা যায়না। বাংলাতে কেবল মাত্র সাতটি স্বরধ্বনি আছে। তার সবগুলোই লঘুধ্বনি।
আজ বাংলায় যে তিন প্রকার ছন্দোরীতি আছে, তাতে গুরু-স্বর বা গুরুধ্বনি উচ্চারণ হয়না। দীর্ঘ ঈ বা আন্যান্য দীর্ঘস্বরবর্ণ কোনো ব্যঞ্জনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সেটি লঘু উচ্চারণ হয়। কেবল প্রত্ন-কলাবৃত্ত ছন্দে এই লঘু-গুরু বিষয়টি আছে। সে কথা পরে হবে।
_____________________________________________________________________________________
নরহরি চক্রবর্তী-র এই গ্রন্থটির বিষয়ে জানতে পড়া যেতে পারে এই বইটি –
বাংলা ছন্দচিন্তার ক্রমবিকাশ – প্রবোধ চন্দ্র সেন, অণিমা প্রকাশনী, কলকাতা ১৯৭৮।
উপরের উদ্ধৃতিটি এই বই থেকেই নেওয়া। এর পরে এইখানে এ বিষয়ে আরও আলোচনার ইচ্ছে রইল।
